শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের ভাগ্যে জুটেছে ২০৯ রানের বড় পরাজয়। তাতে ১-০ ব্যবধানে সিরিজও হেরেছে সফরকারীরা।
দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ৪৩৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য বেঁধে দেয় শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ না জিতে ড্র করতে হলেও বাংলাদেশকে ব্যাট করতে হতো প্রায় দেড় শ ওভার।
বাংলাদেশ করতে পারেনি কোনোটি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও অভিষিক্ত শ্রীলঙ্কান স্পিনার প্রাভিন জয়াউইক্রামার স্পিন বিষে নীল হয়ে গুটিয়ে গেছে মাত্র ২২৭ রানে। অভিষেকেই লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার তুলে নিয়েছেন ১১ উইকেট।
বাঁহাতি স্পিনারের কৃতিত্ব থাকলেও, সেখানে ব্যাটসম্যানদের দোষ খুঁজে নেয়াটা কঠিন কিছু নয়। সাইফ হাসান আউট হয়েছেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে। নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন ব্যাট ও প্যাডের মাঝে বিরাট ফাঁকা জায়গা রেখে। অধিনায়ক মুমিনুল হক আউট হয়েছেন অদ্ভুতুড়ে এক লেইট কাট খেলতে গিয়ে।
দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৭১ ওভার খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৬ বল খেলেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বাকি ছয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ মুশফিকুর রহিমের ৬৩ বল।
তাইজুল ইসলাম বা তাসকিন আহমেদের মতো টেইলএন্ডাররা যেখানে খেলেছেন যথাক্রমে ৩০ ও ৩৩ বল, সেখানে ব্যর্থ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা।
প্রথম ইনিংসেও তামিম ইকবাল বাদে কেউ আধিপত্য দেখিয়ে ব্যাটিং করতে পারেননি। আউট হওয়ায় নিজেদের দোষ তাদের অনেকটাই। সাইফ ও শান্ত দুজনেই বাইরের বল ব্যাটের কানায় লাগিয়েছেন। মুমিনুল আউট হন ফুলটসে। যে বল সামনের পায়ে খেলার কথা, সে বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন মুশফিক।
ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় শিকারও করে নিলেন মুমিনুল। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘যখন আপনি ব্যাটিং ভালো করবেন না, তখন বাঁহাতি বা ডানহাতি যে স্পিনারই হোক ভালো করবে। আমরা দলগতভাবে ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি।’
অভিজ্ঞ ক্রিকেট কোচ ও বর্তমানে বিকেএসপির উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, অভাবটা মানসিক শক্তির।নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, এর চেয়েও বাজে পিচে ব্যাটসম্যানরা রান করেছেন। এমনকি পাল্লেকেলের পিচেও যে রান করা যায়, তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান ভালো শুরু পেয়েছেন। এরপর এমন আত্মসমর্পণে ফাহিম দেখছেন মানসিক শক্তির অভাবটাই।
‘এখানে খেলতে চাইলে খেলা যায় এটার বড় প্রমাণ আমাদের ব্যাটসম্যান সবাই স্টার্ট পেয়েছে। এটার মানে এখানে চাইলেই টেকা যায়। মানসিকভাবে একটা ব্যাপার খুব সম্ভবত কাজ করে আমাদের মধ্যে। এ ধরনের উইকেট হওয়া মানেই বিপজ্জনক। আমি যেকোনো সময় আউট হয়ে যেতে পারি। এ জিনিসটা মাথায় খেলা করে।
‘যারা অভিজ্ঞ, যারা সত্যিকার অর্থেই কোয়ালিটি ব্যাটসম্যান, ওরা এটা নিয়েই খেলে। এটা নিয়ে খেলা যায়। আমরা দেখেছি এর চেয়েও খারাপ উইকেটে ব্যাটসম্যানদের রান করতে। কিন্তু সেই মানসিক শক্তিটার দারুণ অভাব আমার মনে হলো। আত্মসমর্পণ করলাম মনে হলো।’
বাংলাদেশের হারের পেছনে আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় ফিল্ডিং। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে চারটি ক্যাচ ফেলেছে বাংলাদেশ। এক তাসকিনের বলেই তিনটি। লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ক্যাচ দেন ২৮ রানে। স্লিপে শান্ত সহজ ক্যাচ ছাড়লে তিনি করেন ১১৮।
নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, ক্যাচগুলো ধরতে পারলে ভিন্ন হতে পারত ফলাফল। বলেন, ‘যে ধরনের ক্যাচ পড়তে দেখি, সেটা সত্যিই দুঃখজনক। স্পেশালিস্ট কোনো ফিল্ডার নেই। এ টেস্টেও আমাদের ৪-৫টা সুযোগ মিস হয়েছে। সেগুলো যদি ধরতে পারতাম, তাহলে খেলাটা অন্য রকম হলেও হতে পারত। আমাদের এতটা অসহায় হতে হতো না তাহলে। শুধু ব্যাটিংয়ে, বোলিংয়ে আমরা দুর্বল সেটা না, ফিল্ডিংও আমাদের পারফরমেন্সে একটা নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।’
না থাকা স্পেশালিস্ট প্রস্তুত করতে কতখানি নিবেদিত টিম ম্যানেজমেন্ট, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফাহিম।
‘এই খেলাতে ক্লোজ-ইন ফিল্ডার রাখতে হবে এটা আমি জানি। এরা কারা হবে, তারা প্রস্তুত কি না? অবশ্যই ম্যানেজমেন্টের একটা দায় আছে। যাদেরকে তারা এসব পজিশনের জন্য টার্গেট করেছে। তাদের প্রস্তুত করার নিশ্চয়ই সুযোগ আছে। সেটা কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘(ক্লোজ-ইন ফিল্ডার) যদি আজকে প্রস্তুত না হয়, দুই বা ছয় মাস পরও প্রস্তুত হবে না তা আমি মানতে রাজি না। এখন যদি প্রস্তুতি না থাকে সেটা আমি মেনে নিলাম। ছয় মাস বা এক বছর পরেও তারা একই রকম থাকবে, এটা মানা যায় না।’
আপাতত বাংলাদেশ দল ফিরছে সিরিজ হারের তেতো স্বাদ নিয়ে। ফিরে নতুন অ্যাসাইনমেন্ট শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজের প্রস্তুতি। সাম্প্রতিক সিরিজে ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ের এমন অবস্থা দলের জন্য অশনি সংকেতই বটে।